চৌদ্দগ্রামে বহুতল ভবন থেকে ঝাঁপ দিয়ে দশম শ্রেণীর ছাত্রের আত্মহত্যার চেষ্টা, অবস্থা আশঙ্কানজনক
মনোয়ার হোসেন, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মুন্সিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের হোসাইন মোল্লা নামে দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের অপমান সহ্য করতে না পেরে বহুতল ভবন থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এ সময় তার দুটি পা ভেঙে যায় এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে গুরুতর আঘাত পেয়েছে। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার মুন্সিরহাট বাজারে। হোসাইন মোল্লা পাশ্ববর্তী বাসন্ডা গ্রামের বশির মোল্লার ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হোসাইন মোল্লা সোমবার বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে তাঁর এক সহপাঠি ছাত্রীকে উত্যক্ত করে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার ওই ছাত্রীর অভিভাবক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কমলেশ মন্ডলের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের পরে প্রধান শিক্ষক কমলেশ মন্ডল দু’পক্ষের অভিভাবককের তার অফিস কক্ষে ঢেকে নিয়ে শালিশি বৈঠক বসে। বৈঠকে হোসাইন মোল্লার মা’র উপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষক তাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে বিদ্যালয় থেকে বহিস্কারের হুমকি প্রদান করে। এ সময় হোসাইন মোল্লা প্রধান শিক্ষকের পা ধরে ক্ষমা চাওয়ার চেষ্টা করলে তিনি তাকে দূরে সরিয়ে দিলে অপমান সহ্য করতে না পেরে সে অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে পাশ্ববর্তী ডাক্তার ইসমাইল হোসেনের চতুর্থ তলা ভবনের ছাদ থেকে ঝাঁপ দেয়। এ সময় বিকট শব্দ শুনে আশ-পাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে তার অবস্থা আশঙ্কানজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
হোসাইন মোল্লার চাচাতো ভাই রুবেল মোল্লা বলেন, হোসাইন মোল্লা তার কোন সহপাঠি ছাত্রীকে উত্যক্ত করেনি। করেছে অন্য এক ছাত্র। কিন্তু ওই ছাত্রীর অভিভাবক হোসাইন মোল্লাকে অভিযুক্ত করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। শালিশে বিষয়টি আমরা প্রধান শিক্ষককে বুঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আমাদের কোন কথা না শুনে হোসাইন মোল্লাকে অপমানজনক গালমন্দ করে। অপমান সইতে না পেরে সে বহুতল ভবন থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক কমলেশ মন্ডল বলেন, আমি উভয় পক্ষের অভিভাবকদেরকে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করি। কোন গালমন্দ করি নাই। সে আমাদের সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে একটি বহুতল ভবন থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘হোসাইনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। উচুস্থান থেকে পড়ে তার দুটি পা ভেঙে গেছে। বুকে গুরুতর আঘাত পেয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে’।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘হোসাইন নামে মুন্সিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বহুতল ভবন থেকে লাফ দিয়ে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টার একটি সংবাদ পেয়েছি। লিখিতভাবে আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগে পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, ‘শুনেছি হোসাইন নামে একটি ছেলে তার সহপাঠি এক ছাত্রীকে উত্যক্ত করেছে। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে দু’পক্ষের অভিভাবকদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ছেলেটি বহুতল ভবন থেকে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আমি এ ঘটনার সম্পর্কে জেনে তাৎক্ষণিক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ প্রদান করি এবং ছেলেটির উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেছি’।