কোরআন মানব জীবনের মহান পথপ্রদর্শক
হাফেজ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আউয়াল।
কুরআন মজিদ ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, যা আল্লাহর বাণী বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করে থাকেন। এটিকে আরবি শাস্ত্রীয় সাহিত্যের সর্বোৎকৃষ্ট রচনা বলে মনে করা হয়। আল কোরআন’ নামের এই বিশেষত্বের কারণ এটাই যে, এর শব্দ ও মর্ম উভয়ই মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এবং উভয়ের সঙ্গেই শরীয়তের বিধান জড়িত। এর শব্দমালার শুধু তিলাওয়াতও মহান আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠ যিকির ও ইবাদত হিসেবে গণ্য। এর আয়াত ও সূরা তিলাওয়াত করা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত তথা নামাজের অপরিহার্য রোকন ও অংশ হওয়া ছাড়াও নামাজের বাইরেও কোরআনে কারীম তিলাওয়াত করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের সুদীর্ঘ ২৩ বছর জীবনকালে হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন সময় প্রয়োজন অনুযায়ী যে বাণী অবতীর্ণ করেছেন, তার সংকলিত রূপই হলো- কোরআন। কোরআন সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় বর্তমানের মানবজাতির নিকট মজুত আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে- ইনশাআল্লাহ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি কোরআন নাজিল করেছি এবং আমিই এর হেফাজতকারী।’
তথ্য-প্রযুক্তির চাকচিক্যময় চোখ ধাঁধানো এ যুগেও যে গ্রন্থটি সম্পর্কে বিশ্ববাসীর বিস্ময়ের অন্ত নেই তার নাম কোরআনে কারিম। কোরআন একাধারে বিশ্ব পরিচালনার সংবিধান, বিজ্ঞান গ্রন্থ, সমাজ বিজ্ঞান এবং একটি আধ্যাত্মিক গ্রন্থ। জ্ঞানের এমন কোনো শাখা আজও উদ্ভব হয়নি, যে সম্পর্কে কোরআনে উল্লেখ নেই। কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির সব চাহিদা ও জিজ্ঞাসার জবাব এই কোরআন।
কোরআনের ব্যবহারিক পরিচয়
সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব: কোরআন ১০৪ খানা আসমানি কিতাবের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ বিধান গ্রন্থ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘এটা অতীতের সব কিতাবের সত্যতা প্রমাণকারী।’
পরিপূর্ণ জীবন বিধান: আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আজকের এই দিনে আমি দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিলাম।’ বস্তুত কোরআন নাজিল শেষ করার পরই আল্লাহ এই ঘোষণা প্রদান করেন। কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির জীবন সমস্যার সকল সমাধান কোরআনে রয়েছে।
সর্বশেষ আসমানি কিতাব: কোরআন নাজিলের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা দ্বীনকে মানব জাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ রূপদান করেছেন। বন্ধ করে দিয়েছেন নবুওয়ত ও আসমানি কিতাবের দরজা সুতরাং এটা সর্বশেষ খোদায়ী বিধান গ্রন্থ।
ইসলামি আইন হচ্ছে, বিশ্বমানবতার জন্য সর্বাপেক্ষা নিরপেক্ষ ও ইনসাফপূর্ণ আইন। আর এর উৎস হচ্ছে- কোরআনে কারিম।
কোরআনের ভাষাগত মাহাত্ম্য
কাব্যিক অনুরণন: কোরআনের ভাষার কাব্যিক অনুরণন সবচেয়ে আকর্ষণীয়। অতি শক্তিশালী ভাবসম্পন্ন এবং গুরুগম্ভীর বিষয় ও ছন্দের ঝঙ্কারে এর ভাষা হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে। পৃথিবীর আর কোনো গ্রন্থে কাব্যিক সৌন্দর্য ও শক্তিশালী মতবাদের এমন সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায় না।
কোরআনের ভাষা সহজেই মনকে প্রভাবিত করে। এর ভাষার যে শক্তিশালী মিল, বন্ধনগত আবেদন রয়েছে তা অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। তবে যে ব্যাপারটি লক্ষণীয়, তা হলো- ভাষার বন্ধন শক্তিশালী করতে গিয়ে কখনও ব্যাকরণের নিয়ম লঙ্ঘিত হয়নি।
মানবজীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে কোরআন পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘এই কিতাবে সব মানুষের জন্য ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় স্থায়ী কার্যকারিতা ও হক না হকের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। আর পথনির্দেশ ও নসিহত রয়েছে মুত্তাকিদের জন্য।’
ব্যক্তিগত জীবনে কোরআন: মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের যাবতীয় দিক যথা তার আচরণ, তার জীবনযাত্রা, তার সামগ্রিক জীবনযাপনের প্রণালী কোরআনে কারিমে রয়েছে।
পরিবারের গঠন, পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে কোরআনে কারিমে আলোচনা রয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের গঠনরীতি, এগুলোর সদস্য হিসেবে মানুষের আচরণ কেমন হবে সে ব্যাপারে কোরআনে কারিমে নির্দেশিকা রয়েছে। মুসলিম সংস্কৃতির কাঠামো, সংস্কৃতির উপাদান, সাংস্কৃতিক পবিত্রতা ইত্যাদির বিষয়েও কোরআনে নির্দেশ আছে। ধর্মের মূলনীতি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, ধর্মের গঠন ইত্যাদি কোরআনে কারিমে আলোচিত হয়েছে বিশদভাবে। রাষ্ট্রীয় জীবন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবেশের প্রকৃতি কেমন হবে সে ব্যাপারেও কোরআনে কারিমে নির্দেশ আছে। তেমনি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের দায়িত্ব স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে। ইসলামি অর্থব্যবস্থার গঠন-প্রকৃতি, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের গঠনসহ সব অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের প্রকৃতি সম্পর্কে কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলামি রাষ্ট্রের ভূমিকা, আন্তর্জাতিক নীতি কেমন হবে সে ব্যাপারেও কোরআনে নির্দেশিকা রয়েছে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায়, কোরআন মাজিদ এমন এক পরিপূর্ণ বিধান গ্রন্থ যা মানবজীবনের সব দিক নিয়ে আলোচনা করেছে এবং মানুষের জীবন প্রণালী সম্পর্কে সঠিক দিক-নির্দেশনা দেয়।
লেখক,
হাফেজ ও ধর্মীয় লেখক।