বরুড়ায় আসামি জামিন করাতে ইউপি মেম্বারের প্রত্যয়ন জালিয়াতি!
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
তিনি একজন ওয়ার্ড মেম্বার। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং অপহরণ মামলার আসামিকে জামিন করাতে আশ্রয় নিলেন প্রত্যয়ন জালিয়াতির। ঘটনাটি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ১৫নং পয়ালগাছা ইউনিয়নে ঘটেছে। ঘটিয়েছেন ওই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড এর বর্তমান মেম্বার নোমান হোসেন।
ওই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড এর কলাখাল গ্রামের আবুল হাশেম এর ছেলে ফারুক হোসেন ২০১৫ সালে বরুড়া থানায় দায়েরকৃত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং অপহরণ মামলার ২ নম্বর আসামি। মামলার পর দীর্ঘদিন জেলও খেটেছেন আসামি ফারুক হোসেন। তারপর জামিন হয় তার। মামলার ১নং আসামি ৭নং ওয়ার্ড এর মথুরাপুর গ্রামের শাহ জালাল।
জামিনে আসার পর দীর্ঘ সময় কোর্টে হাজিরা না দেওয়ায় আসামি ফারুক এর বিরুদ্ধে কোর্ট ওয়ারেন্ট জারি হলে বরুড়া থানার এএসআই দোলন মিয়া আসামি ফারুককে কুমিল্লা নগরীর ইয়াসিন মার্কেট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
তাকে জামিনে মুক্ত করার জন্য অসদুপায় অবলম্বন করেন ফারুকের পার্শ্ববর্তী (০২নং) ওয়ার্ড মেম্বার নোমান। গত ২৩ আগস্ট ইং তারিখে ১৫নং পয়ালগাছা ইউনিয়নের প্যাডে, মেম্বার নোমান হোসেন এর স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়ন পত্র দেন। যার এখতিয়ার তার নেই এবং জালিয়াতির সামিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই মেম্বার ১৫নং পয়ালগাছা ইউনিয়নের মথুরাপুর, মান্দারতলি এবং নারায়ণপুর গ্রাম নিয়ে গঠিত ২নং ওয়ার্ড এর নির্বাচিত মেম্বার। অপরদিকে প্রত্যয়ন পত্র পাওয়া আসামি ফারুক হোসেন একই ইউনিয়নের ০৭ নং ওয়ার্ড এর কলাখাল গ্রামের বাসিন্দা।
এ বিষয়ে মেম্বার নোমান হোসেন এর বক্তব্য নিতে ফোন করলে তিনি জানান, মামলার ভিকটিম এবং ১নং আসামী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ঘরকন্না করছেন। তাদের একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। কিন্তু মামলার বাদী কোর্ট থেকে মামলা না তোলায়, মামলাটি এখনো চলমান এবং ২নং আসামিকে বারংবার হয়রানি করা হচ্ছে।
আপনি ওয়ার্ড এর মেম্বার হয়ে কোনো নাগরিককে প্রত্যয়ন পত্র দিতে পারেন কী না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কারো উপকার করা তো দোষের কিছু নয়। তবে, আপনার ঘরের পাশে একটা লোক যদি বিপদে পড়ে তখন আপনি কী তাকে সহযোগিতা করবেন না বলেও প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে পয়ালগাছা ইউপি চেয়ারম্যান মাঈন উদ্দিন জানান, আমি আসলে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না, আপনার (প্রতিবেদকের) মাধ্যমেই জানলাম। ওই মেম্বার যদি এটা করে থাকে, তবে মারাত্মক আইনলঙ্ঘন করেছে। যেকোনো প্রত্যয়ন কেবলমাত্র একজন চেয়ারম্যানই দিতে পারেন কোনো ওয়ার্ড মেম্বারের প্রত্যয়ন দেওয়ার এখতিয়ার নেই। যদি প্রত্যয়ন পত্র দেওয়ার বিষয়টি সত্য হয় তবে, আমি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ন্যাস্ত হবো।
বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিসুল ইসলাম বলেন, কোনো ধরনের অন্যায় বরুড়া উপজেলা প্রশাসন বরদাস্ত করবে না। ওয়ার্ড মেম্বার হয়ে কখনো কোনো নাগরিককে প্রত্যয়ন দেওয়ার আইনত অধিকার নেই। খোঁজ নিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানার এবং তদন্ত করে সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।