![](https://dailysomoyarbangladesh.com/wp-content/uploads/2021/07/inbound2933045962418480769-265x300.jpg)
![null](http://)
![](https://dailysomoyarbangladesh.com/wp-content/uploads/2021/07/inbound2933045962418480769-265x300.jpg)
জেলা গঠন-নির্বাচনের তুরুপের তাস
ইয়াসমীন রীমা
প্রশাসনিক সেবা মানুষের কাছাকাছি যত পৌঁছানো যায় ততো দেশের মানুষের অবস্থার উন্নতি হবে। একসময় জেলা সদর ও উপজেলা সাথে গ্রামের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্বল। কারণ পাকা রাস্তা ছিল অত্যন্ত অপ্রতুল। প্রায় স্থানে মানুষ খাল ও নদী পার হতো বাঁশের সাঁকো দিয়ে। এছাড়া কোন বিকল্প ব্যবস্থা ছিল না। তাই দূর-দূরান্তে বসবাস করা মানুষজন সেবা নেওয়া বা সেবা প্রদানকারীদেরকে অনেক ভোগান্তি সহ্য করতে হতো।
এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য বিগত দুই-তিন দশকে উপজেলা ব্যবস্থা যেমনি শক্তিশালী করা হয়েছে, যৌক্তিক কারণে অনেক নতুন পুলিশ ফাঁড়ি/থানা হয়েছে। অন্যদিকে প্রচুর রাস্তা-ব্রিজ ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এই দুইয়ের সাথে যোগ হয়েছে ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা। তাই জনগণের সেবা পাওয়ার দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে অনেকটাই। অন্যদিকে সেবা বিকেন্দ্রীকরণ ও তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধার কারণে মানুষকে আগের মতো আর জেলা বা বিভাগের উপর নির্ভর করতে হয় না। বিকেন্দ্রীকরণ, শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাওয়া, ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সেবার মান অতীতের তুলনায় অনেক প্রত্যাশিত স্তরে পৌঁছেছে। তারপরও এটা সত্য বিকেন্দ্রীকরণ ও মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও উত্তর-উত্তর আধুনিকায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেমন- একসময় মোবাইল ছিল টু-জি, পরে থ্রি-জি, ফোর-জি হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ফাইভ-জি দ্বারপ্রান্তে।
ঠিক তেমনি এক সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর এবং কুমিল্লা সংযোগে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা। বর্তমানে কুমিল্লা ত্রিখন্ডিত হয়ে তিনটি জেলা। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ভাগ হয়ে লালমাই ও সদর দক্ষিণ এবং লাকসাম দ্বিভাগ হয়ে লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলা হয়েছে। মানুষকে সেবা দেওয়ার যুক্তিকতার ভিত্তিতে। কিন্তু তাই বলে এখন পূর্বের কুমিল্লাকে বির্নিমান করে আরো অসংখ্য জেলা-উপজেলা সৃষ্টি করা যৌক্তিক হবে না এবং ইহা রাষ্ট্র ও জনগণের জন্যে কল্যাণকর নয়। প্রতিটি উপজেলা ছয় একর এবং জেলার জন্য একশো একর জায়গার প্রয়োজন হয়। সেখানে স্থাপন করতে হবে অসংখ্য ইমারত, দিতে হবে অনেক অতিরিক্ত লোকবল যার ব্যয়ভার বহন রাষ্ট্রের জন্য অবার্চীন। অন্যদিকে বাংলাদেশ অনেক ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। খাদ্য উৎপাদনের জন্য জমি, মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য কলকারখানা স্থাপন, বসতির জন্য জমি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, অফিস-আদালতের জন্য জমি কোথায়? তাই কোন কোন উপজেলার প্রধান কার্যালয় থেকে অন্য প্রান্তের দূরত্ব ৩৫/৪০ কি.মি.। কোথাও সমুদ্র উপকূল এলাকায় কোথাও রাস্তা-ঘাট পুরো এলাকায় নাই, করাও অনেক কঠিন। আবার করলে টিকে না। সেসব এলাকায় উপজেলা বা জেলা নতুন করে স্থাপনের যুক্তিকতা বরাবরই শূন্য। কিন্তু কোথায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো, যেকোনো প্রান্ত থেকে এক ঘন্টায় জেলায় আর আধঘন্টায় উপজেলায় যাওয়া যায়। কিন্তু যেখানে জেলা-উপজেলা নতুন করে করার দাবী দীর্ঘদিন থেকে শুনে আসছিলাম। মানববন্ধন, পত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়াতে মাঝে মাঝে ঝড় উঠে দেখে ভাবলাম কেন এই দাবি? সময়ের ব্যবধানে দেখলাম এই দাবিটা সারা বাংলাদেশের বেশিরভাগ জায়গায় হয় যখন জাতীয় নির্বাচন বা অন্য কোনো নির্বাচনের পূর্বে কিছু লোকজনকে এই ধরনের দাবি নিয়ে মাঠে সোচ্চার হতে দেখা যায়। আবার নির্বাচনের পরেই দাবি বা এই লোকগুলি তেমন দেখা যায় না।
এ কারণে আমার মনে হলো এই বিষয়টি নিয়ে একটু গভীরে গিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া দরকার। খবর নিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা হল যে, যারা দাবি করছেন তাদের বেশিরভাগই জানে যে, এই দাবিগুলো বাস্তবসম্মত নয় এবং কোন নিয়মেই এই দাবি পূরণ হবে না। তাহলে কেন তারা এত উচ্ছ্বসিত বক্তব্য, মানববন্ধন করছেন ? কারণ হলো আনাগত নির্বাচনে নিজের জন্য জনগণের মাঝে একটু জায়গা করা এবং যিনি এখন দায়িত্বে বা ক্ষমতায় আছেন তাকে জনগণের নিকট বিতর্কিত করা যে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও এই দাবি পূরণ করতে পারে নাই বলে তারা ক্ষমতায় গেলে এই দাবি পূরণ হবে। বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গায় যেমনি আছে তেমনি কুমিল্লাকে ত্রিখন্ডিত করার আন্দোলন খুব তুঙ্গে। কেউ চাচ্ছে দাউদকান্দি, কেউ যাচ্ছে চান্দিনা, আবার কেউ চাচ্ছে লাকসাম। খবর নিয়ে জানা যায় বাক্ষ্মণপাড়া বুড়িচং দাউদকান্দির সাথে যেতে রাজি নয়। আবার চান্দিনার সাথে যেতে রাজি নয় তার পাশের উপজেলাগুলো। অন্যদিকে লাকসামের সাথে সদর, দক্ষিন সদর, চৌদ্দগ্রাম, বরুড়া, লালমাই কেউ যেতে রাজি নয় লাকসামের সাথে। তারপরেও রাষ্ট্রের উপরস্তরে খবর নিয়ে জানলাম কোথাও আন্দোলনের কারণে জেলা হয় নাই, হয়েছে প্রয়োজন ও যুক্তিকতার কারণে। তাই কুমিল্লার সকল উপজেলাগুলো চাইলেও কুমিল্লাকে বিভক্ত করে নতুন জেলা হওয়ার কোনো যুক্তি নাই। কারণ কুমিল্লায় যেকোনো উপজেলা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে আসা-যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো, ইহা উপকূলীয় অঞ্চল বা হাওড় এলাক নয়, সমতল ভূমি।
অতএব, জেলার দাবি হয় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা বা ক্ষমতাসীন ব্যক্তি নিজে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এই দাবির মাধ্যমে আবার জনগণের কাছে যাওয়ার একটি সিঁড়ি স্বরুপ। সর্বপরি জ্ঞাত হলো এই দাবি নির্বাচনের তুরুপের তাস। তাই সতর্ক অগ্রগণ্য।